না পুষ্প না ঘ্রাণ

স্বরলিপি



সাদা ফুলগুলো ফুল নয় ওগুলো মানুষ, এই মানুষ নপুষ্পক’ কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে ঢুকে যায় অরণ্য। অরণ্যের সবথেকে কাছের বন্ধু তিথি। পাঁচ বছর ধরে ওর সাথে সম্পর্ক। মা বাবার একটা দুশ্চিন্তা ছিল মেয়েটি যখন অরণ্য সম্পর্কে সব কথা জানতে পারবে তখন কি সিদ্ধান্ত নেবে! মৌখিক সম্পর্কটাঠহয়তো রাখতে চাইবে না।
অরণ্য লুকিয়ে রাখে ওর অদ্ভূত ঘ্রাণ-শক্তঠ¿à¦° কথা। সন্ধ্যায় ও একা থাকা পছন্দ করে, একা থাকতে চায়। তিথিকে বিদায় দিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তিথি চলে যাবার পর অরণ্যকে ওর মা বলেছিলো, তোর উচিত তিথিকে সব বলে দেয়া।
-কি কথা মা?
-তোর অদ্ভূত ঘ্রাণ শক্তির কথা।
-আমি ওকে বলতে চাই, মানুষ হিসেবে আমার আর সামনে এগোনোর রাস্তা নেই।
অরণ্য নিজের জনালার পর্দা টেনে ঘরের ভেতর অন্ধকার গাঢ় হতে দেয়।
-দরোজাটি বন্ধ করে দিয়ে চলে যাও মা। আমার সন্ধ্যার ঘ্রাণ ভালো লাগে। সব বন্ধ করে দাও। ঘ্রাণ ছেঁকে ছেঁকে ঘরের ভেতর প্রবেশ করুক।
তিথি যখন এসেছিলো তখন দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যার কিছু সময় আগে তিথিকে চলে যেতে বলে অরণ্য। তিথি চলেও যায়, কিছুপথ গিয়ে আবার ফিরে যায়। অরণ্যকে যে কথাটি বলবে বলে এসেছিলো, সে কথা না বলে ফিরে যাচ্ছিলো সে, কিছুদূর যাবার পর মনে করে না বলে সে ফিরবে না। যেকোন ভাবে অরণ্যকে কথাটা বলতেই হতো। তাই ফেরত আসে।
তিথিকে দেখে অরণ্যের মা। অরণ্যের মাকে ‘মা’ ডেকে একটু আগুন চায় তিথি। আগুন দিয়ে কি করবে তিথি! আগুন দিতে রাজী হয় না অরণ্যের মা।
- আবছায়া পোড়ানোর জন্য আগুন দিন।
একটি জ্বলন্ত মোমবাতি তিথিকে এনে দেয় অরণ্যে’র মা। মোমবাতিটি হাতে নিতে নিতে তিথির রং পাল্টে যেতে থাকে, দেখে কাঁপে অরণ্যে’র মা। সম্ভবত অরণ্য সম্পর্কে সব জেনে গেছে তিথি। সে হয়তো আজ শেষবারের মতো কথা বলে চলে যাবে।
তিথি অরণ্যের ঘরে প্রবেশ করে। তখন সবুজ বিছানার চাদর, জানালায় নীল পর্দা একটার রঙ আর একটায় প্রবেশ করেছে মোমবাতির আলোরেখা ধরে।
বিছানায় বাম কাত হয়ে শুয়ে ছিল অরণ্য। ওর পাশে বসে তিথি।
নিন্মস্বরৠঅরণ্য বলে, আমিতো পুরুষ নই, পুরুষের মতো কেউ। একথাটি তোমাকে বলা হয়নি।
তিথির চোখ আলোয় ঝলমল করে ওঠে, আমিতো নারী নই, নারীর মতো কেউ।
উঠে বসে অরণ্য, তিথির হাত অরণ্যের হাতের ওপর।
এবার কণ্ঠ আর কণ্ঠে একাকার হবার পালা। কে কার কণ্ঠে কথা বলে যায় জানি না। পাঠক শুনতে থাকুন।
-চলো হাত ছুঁয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাই। চোখ ছুঁয়ে যাক চোখ। আমাদের গন্ধ ছড়াক। আমরা মানুষ ফুল। ফুঠে উঠি। আমাদের পরাগায়ন নেই।
-মানুষকে ভাসমান সমুদ্র ভাবতে থাকো। দেখো সেই ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুঠের সস্তিকূপ, বিশ্রামের বাগান। আমাদের বুকে ছোট বড় অনেক ক্ষত এখানে পলি জমে যায়, জমে থাকে জল। জল কিংবা ক্ষত জমতে জমতে শুকিয়ে যাবে। আমাদের মুখ পূর্বপুরুঠের শেষ আয়নাঘর।
-আমরা তাদের নিরাকার করে দেওয়ার প্রান্তে নিয়ে আসি। হাতের ভেতর অসংখ্য দিন চুপসে যেতে থাকে। আমাদের নাকে গন্ধ আসে পৃথিবীর জরায়ু রোগের।
- আমরা হাতে তালি দিয়ে জাগিয়ে রাখি রক্তের ভাষা। মানুষের ভেতরে হয়ে উঠি মানুষের জাদুঘর। হাত বাড়িয়ে, বুকের পাজর দেখিয়ে, চোখের কাজল দেখিয়ে মানুষকে এগিয়ে দিতে চাই জীবনের কাছাকাছি।
-জানালায় বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে। আমাদের উচিত পূর্ব পুরুষদের সকলের পক্ষ থেকে এই বাতাসকে স্বাগত জানানো।
- রাত কেটে গেছে, ভোরের বাতাস বিঁধে গেছে আমাদের লোমকূপে। এখন সূর্য উদয় হচ্ছে। চল রোদ ছুঁই। রোদের অসুখ। বয়ষ্ক পৃথিবী এখন রোদের ঠিকঠাক যত্মআত্তি করতে পারে না। চলো আমরা সবুজ হই।
-ফাগুন আসছে।
-নগরের দিকে এগিয়ে আসছে দ্রুতগামী ট্রেন।
- ট্রেনটি পৌঁছালেই তরুন-তরুনিঠা নেমে পড়বে। আজ বছরের প্রথম দিন।